Girlfriend's sister when wife
জোৎস্না রাতে একলা ছাদে দাড়িয়ে আছি।আর চিন্তা করছিলাম আগের কথা।কি থেকে কি হয়ে গেল।আমি যেটা চাইলাম সেটা হলো না।আর যেটা হলো সেটা আমি কখনো কল্পনাও করতে পারি নি।এইসব কথা চিন্তা করছি আর চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি।
হটাৎ অনুভব করলাম কেউ ছাদে আসছে।তাই স্বাভাবিক হয়ে বসলাম।একটু পর দেখি আপু ছাদে আছে।আপু আমার কাছে এসে বললো…
– কিরে আজ না তোর বাসর রাত?
– হ্যাঁ ,তো কি হয়েছে?
– তাহলে তুই ঘরে না গিয়ে এইখানে বসে আছিস কেনো?
– একটু ভালো লাগছিল না তাই ছাদে আসলাম।
– আচ্ছা এখন তাহলে চল।তোর জন্য তানিয়া কখন থেকে ঘরে বসে আছে।
– তুমি যাও আমি আসছি।
– আচ্ছা আমি যাচ্ছি।কিন্তুু জলদি চলে আসিস।
– আচ্ছা আমি আসছি তুমি যাও।
আপু নিচে চলে গেলো।আর আমিও একটু পর নিচে চলে গেলাম।নিজের রুমে গেটে আজকে একটু দ্বিধা বোধ হচ্ছে।যেটা আগে কোনো সময় হয় নি।আর দ্বিধা হওয়ার কারণ টা আমার অনেক ভালো করে জনা আছে।
সব কিছুর বাঁধ দিয়ে দরজা টা খুলে ভিতরে ঢুকলাম।দরজা লাগানোর কোনো ইচ্ছে নেই।তবুও অনিচ্ছা সত্ত্বে দরজা লাগিয়ে দিলাম।একটু পর বিছানার দিকে আমার চোখ পড়লো।আমার সদ্য বিবাহিত সঙ্গিনী লাল বেনারসি পরে মুখের উপর বড় করে একটা ঘোমটা দিয়ে বিছানায় বসে আছে।
কিন্তুু তাকে দেখে আমার মনে কোনো রকম অনুভুতি কাজ করছে না। হয়ত আপনারাও ভাবছেন কেনো আমার ভিতর তার জন্য কোনো অনুভূতি নেই।সেটা একটু পর জানতে পারবেন।আমার উপস্থিতি লক্ষ্য করার পর সে বিছানা থেকে উঠে এসে আমাকে সালাম করতে যাবে।কিন্তুু তার আগে আমি আমার পা টা সরিয়ে ফেললাম।সে হয়ত আমার এইরকম ব্যাবহারের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।তারপর সে আমার দাড়িয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পরলো।
আমিও তার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।তারপর বলতে শুরু করলাম,,,
– দেখুন, আমি আপনাকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না।কারণ আমি অন্য একজনকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি।তাই কোনো সময় আমার উপর অধিকার দেখতে আসবেন না।আর আমি আপনাকে অনেক জলদি মুক্ত করে দিবো।তারপর আপনি ভালো একটা ছেলে দেখে আবার বিয়ে করে নিয়েন।
– যদি আপনি কাউকে ভালোবেসেই থাকেন।তাহলে বিয়ের আগে বলেন নি কেনো? আর আমাকে বিয়েই বা কেনো করলেন?
– আমি বিয়ে করতে চাই নি।আমাকে জোর করে এই বিয়ে করানো হয়েছে,
– তাহলে এখন আমার কি হবে।আপনি আমাকে ছেড়ে দিলে আমাকে কে বিয়ে করবে?
– আমি সেটা জানি না।কিন্তুু একটা জিনিস জেনে রাখবেন যে আমি আপনাকে কোনো সময় নিজের স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবো না।আর আমাদের মাঝে কথা যেনো বাইরে কেউ জানতে না পারে।
– আচ্ছা ঠিক আছে আমি বলবো না।কিন্তুু আমি কি জানতে পারি কে আপনার ভালোবাসার মানুষ।যার জন্য আমার জীবন টা ধ্বংস হতে চলেছে।
– তার নাম মেহের।আমার সাথে একই ভার্সিটিতে পড়তো।
– আচ্ছা আমাকে তো আপনি এখনো দেখেন নি।
– হ্যাঁ।
– তাহলে আমাকে না দেখে আপনি এইসব বলছেন।একবার আমাকে দেখে নেন।তারপর যা বলার বইলে।
– আমার আপনাকে দেখার কোনো ইচ্ছে নেই।আর আমি আপনাকে দেখতেও চাই না।
– আপনি আমাকে দেখতে চান না।কিন্তুু আমি নিজের চেহারা আপনাকে দেখাতে চাই।(এইটা বলে তানিয়া তার ঘোমটা টা উপরে উঠালো।আর আমি থ হয়ে দাড়িয়ে পরলাম)কি হলো এখন বলেন।
– ফারিয়া তুমি এইখানে……!
– আমি ফারিয়া না।আমি তার জমজ বোন তানিয়া।
– কিন্তুু এইটা কি করে হতে পরে আমার জানা মতে মেহেরের কোনো জমজ বোন নেই।
– আপনি জানেন না।কারণ আমি বিদেশে ছিলাম।আর আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আমি দেশে এসেছি।
– আচ্ছা।একটা মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমার ফারিয়া আমার সামনে বসে আছে।যাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি।কিন্তুু ভাগ্যের লিখন কেউ পাল্টাতে পরে না। তানিয়ার ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।
– দেখুন আমি জানি আপনি আপুকে অনেক ভালোবাসেন।কিন্তুু এখন কিছু করার নেই।আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে।আর আমরা কি সুখে সংসার করতে পারি না?
– না, পারি না।কারণ ভালোবাসা ছাড়া সংসার করা যাবে না।আর আমি আপনাকে ভালোবাসি না।আচ্ছা এইসব কথা বাদ দিন আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন।
– আপনি কোথায় ঘুমাবেন?
– সেটা নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না।
তানিয়া গিয়ে শুয়ে পড়ল।আর আমি চলে গেলাম বারান্দায়।হালকা বৃষ্টি হচ্ছে বাহিরে।কিছু ফোঁটা এসে আমার চেহারাকে স্পর্শ করছে।আর হালকা মৃদু বাতাস আসছে একটু পর পর।অনেক ভালো লাগছে মুহূর্ত টা।কিন্তুু আবার একটু কষ্টও হচ্ছে মনের মধ্যে।
ওহ আপনাদের তো পরিচয় দেওয়া হয় নি।আমি হলাম রিয়াদ চৌধুরী।বাবা – মা আর একটা বড় বোন আছে।আমি ফারিয়া নামের একজনকে ভালোবাসি।কিন্তুু দুর্ভাগ্যবশত তার জমজ বোন এর সাথে আজকে আমার বিয়ে হয়ে গেল।অবশ্য বিয়ে আমার মতের বিরুদ্ধে করেছি।
চলুন ফ্ল্যাশব্যাক এ……..
আমরা সবাই আমার বাবার এক বন্ধুর বাসায় তার মেয়ের বিয়েতে আসছি।ফারিয়া মনে যাকে আমি ভালোবাসি সে আব্বুর বন্ধুর মেয়েই। হটাৎ খবর পেলাম বর নাকি তার প্রেমিকার সাথে পালিয়ে গেছে।এই কথা শুনে সবার মুখে অন্ধকর ছেয়ে গেলো।আমিও সেইখানে বসে ছিলাম।
একটু পর বাবা আমাকে একটু সাইডে নিয়ে গেলেন।
-রিয়াদ জলদি করে কাপড় চেঞ্জ করে এই সেরওয়ানি টা পরে আসো।
– আমি সেরওয়ানী পরতে যাবো কেনো?
– কারণ এখন তোমার বিয়ে হবে আমার বন্ধুর মেয়ের সাথে।
– কি বলছ এইসব বাবা।আমি এই বিয়ে করতে পারব না?
– তোমাকে এই বিয়ে করতেই হবে।আমি বেশি কিছু শুনতে চাই না।জলদি যাও আর চেঞ্জ করে বাইরে আসো।
বাবাকে আমি অনেক ভয় পাই।তাই তার কথার অবাধ্য হওয়ার মত সাহস আমার নেই।নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিয়েটা করে ফেললাম।বিয়ে করার সময় দেখতে পেলাম ফারিয়ার চোখ দুটো ছলছল করছে।সেটা দেখে মনে হচ্ছিল আমার বুকে কেউ ছুরি দিয়ে বার বার আঘাত করছে।
বিয়ের কাজ শেষ হওয়ার পর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।তারপর এর ঘটনা তো জানেনই।
বর্তমান………
এইসব ভাবছিলাম।তারপর হটাৎ বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজে বাস্তবে ফিরলাম।অনেক সপ্ন বুনেছিলাম বাসর রাত নিয়ে। হয়ত ফারিয়া ও আমার মত অনেক আসা বেঁধেছিলো নিজের মনে।কিন্তুু সব আসা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।ইচ্ছে ছিলো বাসর রাতে ফারিয়া কে ছাদে নিয়ে গিয়ে দুইজনে একসাথে চন্দ্রবিলাশ দেখবো।তারপর সে আমার কাঁধে মাথা দিয়ে রাখবে।আর আমি তার চুলে বিলি কেটে দিবো।
কিছু দিন আগে আমি একটা বেলিফুলের মালা কিনে রেখেছিলাম।এইটা আমি ফারিয়াকে বাসর রাতে দেওয়ার চিন্তা করেছিলাম।মালাটা এখন পর্যন্ত সুখে গেছে।কিন্তুু আমি অনেক যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছিলাম।আমার ভালোবাসার মানুষ টার জন্য।তাকে নিজ হতে সেটা পরিয়ে দেওয়ার জন্য।কিন্তুু সব ইচ্ছে তো আর পূরণ হয় না।এইসব চিন্তা করতে করতে সেখানেই ঘুমিয়ে গেলাম।সকাল বেলা মিষ্টি রোদের আলোয় ঘুম ভেংগে গেল। হয়ত আজকে ফারিয়ার সাথে বিয়ে হলে তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতাম।সকাল বেলা সে তার ভেজা চুলের পানি দিয়ে আমার ঘুম ভাঙাতে।
তারপর উঠে রুমে গেলাম।গিয়ে দেখি তানিয়া রুমে নেই। হয়ত নিচে গেছে।আমি দেরি না করে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম।গিয়ে দেখি তানিয়া আম্মুর সাথে রান্না ঘরে রান্না করছে।আমি গিয়ে টেবিলে বসলাম।একটু পর বাবা আর আপুও আসলো।তারপর সবাই খাবার খেতে বসলাম।
– বলছিলাম কি বিয়ে তো করে ফেললি।তাহলে কিছুদিন বৌমাকে নিয়ে কথা থেকে ঘুরে আস।(বাবা)
– বাবা এখন যাওয়া যাবে না।অফিসে অনেক কাজ আছে।আর তার উপর কালেই তো মাত্র বিয়ে হলো।কিছু দিন পরে না হয় যাই।
– অফিস নিয়ে তোকে টেনশন করতে হবে না।আমি আর সুমি মিলে সামলে নিবো।
– না বাবা।এখন আমার যাওয়ার ইচ্ছে নেই।
– আচ্ছা ঠিক আছে তুই যেটা ভালো মনে করিস।
নাস্তা করে উপরে চলে আসলাম।একটু পর তানিয়া আসলো।এসে আমার সামনে দাড়িয়ে রইলো।আমি মোবাইল দেখছিলাম তাই খেল করি নি।একটু পর খেল করলাম।
– কিছু বলবেন কি?
– হ্যাঁ।
– জি বলুন।
– একটু পর আমাদের বাসায় যেতে হবে।আপনি রেডি হয়ে নিন।আর আপনার কি কি কাপড় লাগবে আমাকে বলে দিন আমি ব্যাগে নিয়ে নিবো।
– আমার বেশি কিছু নেওয়া লাগবে না।আর আমি কালকে চলে আসবো।আপনি চাইলে কিছু দিন থেকে আইসেন।
– না তাহলে আমিও আপনার সাথে এসে পারবো।
– হুম,,!
তানিয়া চলে গেলো ব্যাগ গোছাতে।আমিও একটু ঘুমিয়ে নিলাম।দুপুরের দিকে তানিয়ার বাসা থেকে তার কিছু আত্মীয় আসলো আমাদের নিতে।আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখি তারা সবাই বাবা – মার সাথে কথা বলছে।তারপর তানিয়ার বাসায় চলে গেলাম। তানিয়ার বাসায় দরজা খুলতে আমি অবাক।ফারিয়া আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।কিন্তুু তার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।চেহারা পুরো ফুলে গেছে।মনে হয় কালকে সারারাত কান্না করছে।আমার তাকে এইরকম দেখে অনেক কষ্ট হচ্ছিল।কিন্তুু সবাই সামনে থাকায় কষ্ট টা চাপিয়ে রাখলাম।তানিয়ার দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম তানিয়া আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমরা সবাই ভিতরে যাওয়ার সাথে সাথে তানিয়ার মা এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো।
– কেমন আছো আম্মু।
– এত সময় ভালো ছিলাম না।কিন্তুু এখন তুই এসে গেছিস এখন ভালো আছি।
– মাহিমা জামাই বাবাজিকে নিয়ে ঘরে যাও।
তানিয়া আমাকে নিয়ে তার ঘরে আসলো।ঘরটা দেখতে অনেক সুন্দর আর গোছালো।দেওয়ালে তানিয়া আর ফারিয়ার কিছু ছবিও লাগানো আছে।আবার তানিয়ার ছোট বেলার ছবিও দেখলাম।আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।বের হয়ে এসে দেখি তানিয়া বসে আছে।
– আম্মু আমাদের খেতে ডাকছে চলুন।
– হুম।
আমিও তার পিছে পিছে নিচে গেলাম।টেবিলে এসে আমি অবাক।অনেক টাইপ এর ডিশ রাখা আছে টেবিলে।দেখে আমার জিভে পানি চলে আসলো।তারপর সবাই খেতে বসলাম।কিন্তুু সবাই আমাকে একটা পর একটা খাবারের আইটেম দিয়েই যাচ্ছে।আমি আর খেতে পারছি না।কিন্তুু কোনো রকম সব খাবার শেষ করে রুমে আসলাম।
রুমে আসতেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। হয়ত তানিয়া আমার অবস্থা বুঝতে পেরেছে।তাই আমার জন্য এক গ্লাস ঠান্ডা সফট ড্রিংক নিয়ে আসলো।
– এইটা খেয়ে নিন তাহলে ভালো লাগবে।
আমিও কিছু না বলে খেয়ে নিলাম।তারপর এক ঘুম দিলাম।বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ঘরে বসে আছি।একটু পর ফারিয়া আসলো।আমি তাকে দেখে প্রথমে অনেক চমকে গেছিলাম।কিন্তুু পরে অনেক ভয় করছিল।কারণ কেউ আমাদের এক সাথে দেখে ফেললে খারাপ ভাববে।কিন্তুু ফারিয়া এসে দরজা বন্ধ করে দিল।তারপর আমার কাছে এসে বললো।
– বিয়ে হলো একদিনও ঠিক মত হলো না আর আমাকে ভুলে গেছো।
– ফারিয়া তুমি এইটা কি বলছ।আমি কি তোমাকে ভুলতে পারি।তুমি তো আমার শ্বাস প্রশ্বাসে মিশে আছো ……
– আমি তো জানি।বউ এর আদর পেয়ে আমাকে ভুলে গেছো।বাহ,,,,এই ছিলো তোমার ভালোবাসা।
– ফারিয়া বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভালোবাসি।আর আমি তানিয়া কে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানি না।আমি তাকে অনেক জলদি ছেরে দিবো।তারপর তোমার সাথে বিয়ে করবো।
– তুমি সত্যি বলছো?
– হ্যাঁ আমি সত্যি বলছি।এখন একটু জড়িয়ে ধরি?
– আচ্ছা ধরো।
তারপর ফারিয়াকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।কিন্তুু হটাৎ দরজায় কে যেনো ধাক্কা দিলো।আমার তো ভয়ে ঘাম ঝরতে লাগলো।যদি তার বাবা মা দেখে ফেলে তাহলে তো সর্বনাশ।আরে তুমি ভয় পাচ্ছো কেন।কিছু হবে না।আমি গিয়ে দেখছি।ফারিয়া গিয়ে দরজা খুলে দিল।কিন্তুু দরজার বাহিরে যে দাড়িয়ে ছিল সে হয়ত এইটা আসা করে নি।